ছয় মাসে ১৬টি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ

নানা ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে এখনো নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক কোনো কার্যক্রম শুরু করিনি।
রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের জন্য দল গঠন করেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জন-অধিকার পার্টির চেয়ারম্যান ইসমাইল সম্রাট। এই দলটি গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মিলনায়তনে আত্মপ্রকাশ করে। ইসমাইল সম্রাট বলেন, যেহেতু বাংলাদেশে বড় একটি ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল রাজনৈতিক মাঠ থেকে সরে গেছে, সেহেতু রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হয়েছে। আমরা সেই রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণের জন্য আমাদের দল ঘোষণা করেছি।
নতুন দল হিসেবে রাজনীতির মাঠে কিছু ক্রিয়াশীল রয়েছে সার্বভৌমত্ব আন্দোলন ও জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। সার্বভৌমত্ব আন্দোলন গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ করে। দলটি প্রাথমিক পর্যায়ে সাতজনকে উপদেষ্টা করেছে। তারা হলেন কর্নেল (অব.) মশিউজ্জামান, সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলী, হেলাল উদ্দিন, ফজলুল সাত্তার, ড. মেজর (অব.) সিদ্দিক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) তোফায়েল ও এআইজি (অব.) মালেক খসরু। এ ছাড়া ১০ জনকে সংগঠক ও ৮৩ জনকে সহসংগঠক করা হয়েছে।
আগামী নির্বাচনে ‘সার্বভৌমত্ব আন্দোলন’ থেকে ৫০ জনের বেশি প্রার্থী অংশ নেবে বলে জানিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় সংগঠক শ্মশান ঠাকুর। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের দুটি সেল এরই মধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য কাজ করছে। তবে কোন দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে আমরা নির্বাচন করব সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তবে দলটির ভবিষ্যৎ এখনো নির্ধারণ হয়নি বলে জানিয়েছেন সার্বভৌমত্ব আন্দোলনের অন্যতম উপদেষ্টা সাবেক কূটনীতিক সাকিব আলী।
তিনি বলেন, আমরা আত্মপ্রকাশ করার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সাধারণ মানুষের কিছু সমস্যা নিয়ে আমাদের কার্যক্রম শুরু করি। এ ছাড়া জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও বিডিআর সদস্যদের নিয়েও আমরা কিছু কার্যক্রম চালিয়েছি। এই মুহূর্তে চিন্তা করছি যে সার্বভৌমত্ব আন্দোলন যদি আরেকটু ছড়িয়ে পড়ে তখন আমরা দেখব এর ভবিষ্যৎ কী হতে পারে।
ছাত্র-জনতার সঙ্গে বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় অবস্থানে রয়েছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ। দলটি মুসলিম জাতীয়তাবাদী নতুন ধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে আত্মপ্রকাশ করে। খোমেনী এহসানকে আহবায়ক ও হাসান আরিফকে সদস্যসচিব করে ৭৭ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করে দলটি।
দলের কার্যক্রমের বিষয় জানতে চাইলে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সদস্যসচিব হাসান আরিফ বলেন, আমরা আমাদের ১১ দফা দাবি জানিয়েছিলাম। এই দাবিগুলো বাস্তবায়নে আমরা লিফলেট বিতরণ ও পথসভা করছি। এর পাশাপাশি আমরা ছাত্র-জনতার সব আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অবস্থান করছি।
প্রথম আত্মপ্রকাশ নিউক্লিয়াস পার্টির:
গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ১৮ দিন পর ২৩ আগস্ট প্রথম রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ‘নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ (এনপিবি)’। দলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আত্মপ্রকাশ করে। সেদিন দলটির পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আহবায়ক হিসেবে নিজের নাম ঘোষণা করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ সিদ্দিক হোসাইন। এ ছাড়া অপরাধ বিশেষজ্ঞ এসএসডি জিদানকে সদস্যসচিব এবং ইফতেখার আহমেদ খানকে দলটির মুখপাত্র করা হয়।
গত বছর আরো পাঁচটি দলের আত্মপ্রকাশ:
নিউক্লিয়াস পার্টি অব বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশের ১৬ দিন পর ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার একটি হোটেলে এস এম শাহাদাতের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টি। ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটিতে সাইফুল আলমকে মহাসচিব এবং মীর আমির হোসেন আমুকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়। জানা যায়, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক পার্টির নেতাকর্মীরা জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটভুক্ত জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) থেকে বের হয়ে এই দল গঠন করেছেন।
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি)’। গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রত্যয় নিয়ে দলটির আহবায়ক করা হয়েছে মো. সিরাজুল ইসলাম ও যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে মো. বকুল হোসেন হৃদয়কে।
গত বছরের ১৫ নভেম্বর ‘বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি)’ নামে আরো একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এক অনুষ্ঠানে দলটির ৭১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। লন্ডনপ্রবাসী মো. সোহেল রানাকে দলটির আহবায়ক করা হয়।
২৮ নভেম্বর আত্মপ্রকাশ করে ‘বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি।’ নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে দলটি। পরে কণ্ঠভোটে প্রকৌশলী ইকরামুল খান চেয়ারম্যান ও আবুল কালাম আজাদ মহাসচিব নির্বাচিত হন।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি)’ নামের আরেকটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই নতুন দলে গোপালগঞ্জ জেলার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রশিদ চৌধুরীকে আহবায়ক করা হয়।
চলতি বছর আরও তিনটি দলের আত্মপ্রকাশ:
গত ৪ জানুয়ারি ‘দেশ জনতা পাটির’ নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। আত্মপ্রকাশের পর দলটির তরফ থেকে ১০৫ সদস্যবিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণা করেন দলের প্রধান উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ইকবাল কবির। মো. নূর হাকিমকে দলটির চেয়ারম্যান ও ইদ্রিস আলী নান্টুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
গত ২৮ জানুয়ারি মেজর জেনারেল (অব.) মো. এহতেশাম উল হকের নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক শক্তি’ নামের আরেকটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘নতুন সমাজ সমৃদ্ধ দেশ, হোক জনগণের বাংলাদেশ’ স্লোগান সামনে রেখে ‘বাংলাদেশ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি’ নামে আরেকটি রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করে। ওই দিন সংবাদ সম্মেলন করে দলের আনুষ্ঠানিক যাত্রার ঘোষণা করেন দলটির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. বিভূতি রায়।
নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার নেতৃত্বে নতুন দল: ২০২৪ সালের ১৬ নভেম্বর গাজীপুর মহানগরের টঙ্গী এলাকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতার নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ মুক্তির ডাক ৭১’ নামে একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ছাত্রলীগের মতোই লোগো নিয়ে গোপনীয়তার সঙ্গে ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে দলটির উন্মোচন ঘটে। আল রিয়াদ-আদনান অন্তরকে সংগঠনের চেয়ারম্যান ও খলিলুল্লাহ গাজীকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়া হুমায়ুন কবির নামে একজনকে দলটির মুখপাত্র করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন