খুঁজুন
শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫, ১ চৈত্র, ১৪৩১

অবৈধ টাকা হালালে মাছ চাষে ৯৫ কোটি টাকা আয় দেখিয়েছেন শেখ তাপস

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ১০:৫৪ অপরাহ্ণ
অবৈধ টাকা হালালে মাছ চাষে ৯৫ কোটি টাকা আয় দেখিয়েছেন শেখ তাপস

দুর্নীতি মাধ্যমে অর্জিত টাকা হালাল করতে শেখ পরিবারের সদস্য শেখ ফজলে নুর তাপস মৎস্য চাষির খাতায় নাম লেখিয়ে রাতারাতি বনে যান প্রায় শতকোটি টাকার মালিক। পুকুরে মাছ চাষ থেকে মাত্র ৩ বছরে আয় দেখান ৯৫ কোটি ২৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩১ টাকা।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, জাল জালিয়াতির চুক্তিতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার ভিটি, নাল ও বাগান শ্রেণিভুক্ত জমিকে পুকুর হিসেবে লিজ গ্রহণ দেখিয়ে রাতারাতি মৎস্য চাষি বনে যান শেখ তাপস।

বাসস’র হাতে আসা তথ্য প্রমাণে উপরোক্ত তথ্য পাওয়া যায়। দেখা যায়, শেখ ফজলে নুর তাপস ব্যারিস্টার হিসেবে ২০০১ সাল হতে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ২০১০ সাল হতে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে আইন ব্যবসা পরিচালনা করেন। আইন পেশায় থেকে যা আয় করেছেন, তার শত গুন বেশি আয় দেখা যায় সংসদ সদস্য ও মেয়র হওয়ার পর।

তাপস ২০০৯ সালে নবম সংসদে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ২০১৪ সালে দশম ও ২০১৯ সালে একাদশ সংসদে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ২০২০ সালের ১৬ মে হতে সালের ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার স্ত্রী আফরিন তাপসকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে দেখানো হয়েছে। স্ত্রীর হিসাব বিবরণীতেও মৎস্য ব্যবসায়ী, ফ্ল্যাট, প্লটের মালিক, ব্যাংকের আয়সহ বিপুল সম্পদ দেখানো হয়েছে।  তাদের দুই সন্তান শেখ ফজলে নাসোয়ান ও শেখ ফজলে নাওয়ারের নামে সম্পদ রয়েছে।

দুদকের তিন সদস্যের অনুসন্ধান টিম ইতোমধ্যে শেখ ফজলে নুর তাপস ও তার স্ত্রী আফরিন তাপসের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তদন্ত টিমে রয়েছেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মো. ফেরদৌস রহমান এবং উপ-সহকারী পরিচালক আইরিন আক্তার। দুদক সূত্র জানান, তারা শেখ ফজলে নুর তাপস, তার স্ত্রী আফরিন তাপসসহ পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত স্থাবর-অস্থাবর এবং নগদ টাকার অনুসন্ধানে নেমেছে ।

তদন্তে দেখা যায়, তাপসের নামে পূর্বাচলে নতুন শহর প্রকল্পে ১ নম্বর সেক্টরে ১০২/এ সড়কে ১০ কাঠার প্লট, মাদারীপুর হাউজিং এস্টেটে ৫ কাঠার জমি এবং বনানীতে জে ব্লকে ১৮ নম্বর সড়কে ৭০ নম্বর হোল্ডিং-এর ৫ কাঠা জমির ওপর ৫ তলা ভবন রয়েছে। এসবের আনুমানিক মূল্য দেখানো হয়েছে ৪ কোটি ৮১ লাখ ৪৬ হাজার ২০৭ টাকা।

ঢাকার ধানমন্ডিতে তার স্ত্রীর নামে কেনা ফ্ল্যাটে বসবাসকারী তাপস মধুমতি ব্যাংকের মালিকানার পাশাপাশি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার একজন মৎস্যচাষি হিসেবে তার আয়কর নথিতে বিপুল টাকা ও সম্পদের অর্জন দেখিয়েছেন। দুদকের জনৈক কর্মকর্তা জানান, মূলত আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ তাপস ও তার পরিবারের সদস্যরা অনৈতিকভাবে উপার্জিত টাকা ও সম্পদ বৈধ করার অভিপ্রায়ে মৎস্য চাষের সুবিধা গ্রহণ করেন। সরকারের আয়কর নথিতে মৎস্য চাষি হিসেবে নিজেদের দেখাতে গিয়ে তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। ২০১২-১৩ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত তিনি ও তার স্ত্রী মৎস্যচাষি ছিল। এর আগে এবং পরে তাদের আর মৎস্য চাষ ছিল না।

শেখ তাপসের আয়কর নথিতে দেখা যায়, তিনি ২০১২-১৩ অর্থবছরে মৎস্য চাষ থেকে আয় করেছেন ৪১ কোটি ২৬ লাখ ৫২৫ টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে আয় করেছেন ১৮ কোটি ৬ লাখ ১ হাজার ২৫৯ টাকা এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মৎস্য চাষে আয় করেছেন ৩৫ কোটি ৯২ লাখ ৪২ হাজার ২৪৭ টাকা। অথচ ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরে তার মোট আয় ছিল মাত্র ১৫ লাখ ২৬ হাজার ১৮১ টাকা, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩৬ লাখ ৬০ ৯৪৭ টাকা। এরপর থেকে পুকুর চুরির মাধ্যমে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছের প্রবাদ বাক্য শেখ তাপসের ভাগ্যকে পরিবর্তন হওয়ার কথা জানান তদন্ত টিম।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, টুঙ্গিপাড়ার পুকুরে মৎস্য চাষ করে মাত্র তিনবছরে আয় করেছেন ৯৫ কোটি ২৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩১ টাকা। অথচ দুদকের তদন্তে দেখা যায় একটি ভিটের বাগানবাড়িতে তিনটি পুকুর থাকলেও ১১টি পুকুর ৪৭ একর নাল জমি দেখিয়ে এই মৎস্য চাষের আয় দেখানো হয়।

তদন্তকারী এক কর্মকর্তা জানান, এতদিন গল্পে পুকুর চুরির কথা শুনেছি। এবার সত্যি-সত্যি দেখলাম পুকুর চুরি কাকে বলে। অনেকটা ভরাট তিনটি পুকুরকে ১১টি পুকুর বানানো হয়েছে। নাল জমিকে মাছের ঘের দেখিয়ে মৎস্য চাষ দেখানো হয়েছে

টুঙ্গিপাড়ার শেখ নুরুল হকের পুত্র শেখ ফজলুর রহমান মারুফের কাছ থেকে ২০১১ সালের ১ জুলাই তিনবছরের লিজ চুক্তিতে এসব পুকুর ও নাল জমি নন-জুডিশিয়াল অ-রেজিস্ট্রিকৃত চুক্তিতে লিজ নেন শেখ ফজলে নুর তাপস। পরবর্তীতে দেখা যায় ১১টি পুকুরের মধ্যে তিনটি পুকুর ২০১২ সালের ১ জুলাই অর্থাৎ একবছর পর অপর এক অ-রেজিস্ট্রিকৃত চুক্তিতে শেখ ফজলে নুর তাপস তার স্ত্রী আফরিন তাপসকে দুইবছরের জন্য নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তি দেখিয়ে মৎস্য চাষের লিজ দেন। শেখ তাপস শেখ ফজলুর রহমান মারুফের সঙ্গে এসব চুক্তি সম্পাদন করলেও দুদকের তদন্তে দেখা যায়, এসব জমির বিএস রেকর্ডপত্র সঠিক নেই। কিছু জমি শেখ ফরিদ উদ্দিন আহমদ গং, কাজী শাহজাহান গং, রাজকৃষ্ণ ও শুকদেব বিশ্বাসের নামে রয়েছে। ফলে লিজ চুক্তিসহ কাগজপত্র জালজালিয়াতির মাধ্যমে সম্পাদিত বলে দুদকের তদন্তে প্রতীয়মান হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে নিজের প্রতিষ্টিত মধুমিতা ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় ২৬টি এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক মতিঝিল শাখায় একটি হিসাবের সন্ধান পেয়েছে। হিসাবগুলোতে ৩০৪ কোটি ৩৩ লাখ ৫৮ হাজার ৫২৮ টাকা জমা হয়েছে। সেখান থেকে উত্তোলন হয়েছে ২৩৪ কোটি ৮২ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫০ টাকা। অর্থাৎ ৫৩৯ কোটি ১৬ লাখ ২৫ হাজার ২৭৮/- টাকা লেনদেন করেছেন। একাউন্টগুলোতে এখন স্থিতি আছে ৬৯ কোটি ৫০ লাখ ৯১ হাজার ৭৭৪ টাকা।

এছাড়া মধুমতি ব্যাংক পিএলসি, মতিঝিল শাখার আরএফসিডি) হিসাব নম্বর-১১০১১৫৬০০০০০০০৫ এর অনুকূলে শেখ তাপস ২৩ মার্চ ২০১৭ তারিখ হতে ২৫ জুন, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত ২ লাখ ৬৩ হাজার ৭৩৬ মার্কিন ডলার জমা এবং ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৯১ মার্কিন ডলার উত্তোলন করেছেন। অর্থাৎ তিনি তার ব্যাংক হিসাবে মোট ৫ লাখ ১৭ হাজার ৫২৭ মার্কিন ডলার লেনদেন করেছেন। বর্তমানে উক্ত হিসাবে ৯ হাজার ৯৪৫ মার্কিন ডলার স্থিতি রয়েছে।

এছাড়া তিনি প্রিমিয়ার ব্যাংক পিএলসি, মতিঝিল শাখার হিসাব নম্বর-০১০৮১১১০০০০০৯০১টি খুলেন ২০০২ সালের ১৯ জুন। হিসাবটি থেকে তিনি এ পর্যন্ত ৪৪৩ বার ৫ লাখ টাকা (পাঁচ লাখ) বা তার বেশি জমা অথবা উত্তোলন করেছেন। উল্লিখিত পরিমাণ টাকা লেনদেন তার জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে অনুসন্ধান দলের মতামতে উঠে এসেছে। তিনি সংসদ সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র হিসেবে দায়িত্বপালনকালে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে এসব অর্জিত টাকা বর্ণিত হিসাব সমূহে জমা এবং পরবর্তীতে উক্ত টাকা উত্তোলনপূর্বক হস্তান্তর ও স্থানান্তর করেছেন মর্মে দুদক প্রমান পেয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শেখ তাপসের নামে মধুমতি ব্যাংকের প্রতিটি ১০ টাকা মূল্যের শেয়াররের সংখ্যা ৩ কোটি ৩২ লাখ। যার মূল্য ৩২ কোটি টাকা। এছাড়াও সাড়ে ১২ টাকা দরে ক্রয়কৃত ৮০ হাজার ব্যাংক শেয়ারের মূল্য ১ কোটি টাকা। তার দুটি গাড়ি রয়েছে। যার মূল্য ১ কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার ২২৫ টাকা। স্বর্ণালঙ্কার রয়েছে ১ কোটি টাকা, অন্যান্য সম্পদ ১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে ১১৩ কোটি ৮৮ লাখ ৭৭ হাজার ৫৭ টাকার।

দুদক সুত্র জানিয়েছে- মধুমতি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় খোলা ২৬টি একাউন্ট আদালতের নিদের্শনায় লেনদেন অবরুদ্ধ রাখা হয়েছে। একাউন্টগুলো হচ্ছে- ১১০১১২১০০০০০০০২, স্থিতির পরিমান ৪ কোটি ৬৩ লাখ ১৪ হাজার ৫৬১ টাকা, ১১০১২৫৫০০০০০০০২ হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ২ কোটি ১৫ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৬ টাকা, ১১০১২৫৫০০০০০১৭৭ হিসাব খাতে স্থিতির পরিমান ৭ কোটি ৭৪ লাখ ৫৮ হাজার ৬২০ টাকা, ১১০১২৫৫০০০০০২৩৬ হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ৯ কোটি ৭৩ লাখ ৪০ হাজার ১৯৭ টাকা, ১১০১২৫৫০০০০০৪৮১ হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ৩২ লাখ ৭০ হাজার ২৭১ টাকা, ১১০১২৫৫০০০০০৪৬২ হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ৮ কোটি ২০ লাখ ৯০ হাজার ১৩৭ টাকা, ১১০১২৫৫০০০০০২৯৯ হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ১ কোটি টাকা, ১১০১২৫৫০০০০০৩০০ হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ১ কোটি টাকা, ১১০১২৫৫০০০০০৩০১ হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ২ কোটি টাকা, ১১০১২৫৫০০০০০৩০২ হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ১ কোটি ৫৬ হাজার ২৫০ টাকা, ১১০১৩৬১০০০০০৩০৯ এমআইএস হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ৫ কোটি টাকা, ১১০১৩৬১০০০০০৩১১ এমআইএস হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ৫ কোটি টাকা, ১১০১৩৬১০০০০০৩১২ এমআইএস হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ৫ কোটি টাকা, ১১০১৩৬১০০০০০৩১৭ এমআইএস হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ১ কোটি টাকা, ১১০১৩৬১০০০০০৩১৮ এমআইএস হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ১ কোটি টাকা, ৮২ হাজার ৪৪০ টাকা, ১১০১৩৬১০০০০০৩২০ এমআইএস হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ১ কোটি টাকা, ১১০১৩৬১০০০০০৩২১ এমআইএস হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ১ কোটি ৮২ হাজার ৪৪০ টাকা, ১১০১৩৬১০০০০০৩২৩ এমআইএস হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ১ কোটি টাকা, ১১০১৩৬১০০০০০৩২৪ এমআইএস হিসাবখাতে স্থিতির পরিমাণ ১ কোটি ৮২ হাজার ৪৪০ টাকা, ১১০১৩৬১০০০০০৩২৫ এমআইএস হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ২ কোটি টাকা, ১১০১৩৬১০০০০০৩২৬ এমআইএস হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ২ কোটি ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৮০ টাকা, ১১০১৩৬১০০০০০৩২৮ এমআইএস হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ৩ কোটি টাকা, ১১০১৩৬৬০০০০০৭৭৯ ডিবিএস হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ১ কোটি টাকা, ১১০১৩৬৭০০০০০১১৭ টিবিএস হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ১ কোটি টাকা, ১১০১৩৬৭০০০০০১৪৫ টিবিএস হিসাব খাতে স্থিতির পরিমাণ ১ কোটি টাকা এবং প্রিমিয়ার মতিঝিল শাখার ০১০৮১১১০০০০০৯০১ হিসাব খাতে ৮ লাখ ৪২ হাজার ৬৩৭ টাকা জমা রয়েছে। এছাড়াও মধুমতি ব্যাংক মতিঝিল শাখার আরএফসিডি একাউন্ট নম্বর-১১০১১৫৬০০০০০০০৫ হিসাব খাতে ৫ লাখ ১৭ হাজার ইউএস ডলার লেনদেনের পর বর্তমানে স্থিতি রয়েছে ৯ হাজার ৯৪৫ ইউএস ডলার।

অনুসন্ধানকারী দল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে, অস্বাভাবিক লেনদেনের মাধ্যমে তিনি তার অপরাধলব্ধ অবৈধ অর্থ জ্ঞাতসারে হস্তান্তর ও স্থানান্তর করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। উল্লেখিত লেনদেনসমূহ তার জ্ঞাতআয়ের উৎসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল না মর্মে প্রতীয়মান হয়। অর্থাৎ তিনি ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ তার নামীয় উল্লেখিত হিসাবসমূহে লেনদেন করেছেন।

অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি পাবলিক সার্ভেন্ট ছিলেন এবং তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। যার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা অনুসন্ধানকালে পাওয়া যায়নি। তৎপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(১) (ডি) ও ৫(১) (ই) ধারার অপরাধ করেন, যা উক্ত আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সে কারণে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারার সংযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনয়ন করা যায়।

মসজিদে ঢুকে ৩ ভাইকে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: বুধবার, ১২ মার্চ, ২০২৫, ৬:৪৩ অপরাহ্ণ
   
মসজিদে ঢুকে ৩ ভাইকে হত্যার ঘটনায় প্রধান আসামি গ্রেপ্তার

মাদারীপুরে মসজিদে ঢুকে তিন ভাইকে হত্যার ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত হোসেন সরদারকে (৬০) গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। রাজধানী ঢাকার আশুলিয়া থানার চিত্রাশাইল থেকে মঙ্গলবার গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়

বুধবার (১২ মার্চ) দুপুরে র‍্যাব-৮-এর হেডকোয়াটার্স বরিশালে সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য জানান অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নিস্তার আহমেদ।

তিনি জানান, চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে আমরা বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। গ্রেপ্তারকৃত প্রধান আসামি হোসেন সরদার নিহত তিন ভাইয়ের আপন চাচা। বালু উত্তোলন নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলে আসছিল।

কর্নেল আহমেদ বলেন, যারা নিহত হয়েছেন এবং হত্যায় যারা অভিযুক্ত তারা সবাই একসময়ে আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বালু ব্যবসা ও বালু মহলার ইজারা নিয়ে বিরোধের সূত্র ধরে হোসেন সরদারের নেতৃত্বে ৮ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ৮০/৯০ জনের দল নিয়ে চারটি বাড়িতে হামলা চালায়। প্রাণ বাঁচাতে ভিক্টিমরা বাড়ির সামনের মসজিদে আশ্রয় নিলে হোসেন সরদারের নেতৃত্বের সন্ত্রাসীরা মসজিদে ঢুকে সাইফুল সরদার, তার ভাই আতাউর সরদারকে কুপিয়ে ঘটনাস্থলেই হত্যা করে। এ ছাড়া তাদের চাচাতো ভাই পলাশ সরদারকে (১৮) গুরুতর জখম করলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হামলাকারীরা আরও পাঁচজনকে কুপিয়ে জখম করে এবং নিহতদেরসহ চারটি বাড়িতে আগুন দিয়ে লুটপাট করে।

অধিনায়ক বলেন, এই ঘটনায় মোট ৫৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। র‍্যাব-৮-এর অধীনে মাদারীপুর ক্যাম্পের পৃথক অভিযানে সুমন সরদার (৩৩) নামে এজাহারভুক্ত আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকি আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ বানিজ্য অভিযোগ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার নাজির আহমেদ রিপন ও সদরের সাব রেজিস্ট্রার জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ আর দুর্নীতি অভিযোগ পাওয়া গেছে এখানে একটাই সিস্টেম ঘুষ দিন আপনার কাজ বুঝে নিন ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না এই অফিসে

ক্রাইম রিপোর্টার আহমেদ ইমতিয়াজ
প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ মার্চ, ২০২৫, ১০:৪৫ অপরাহ্ণ
   
চাঁপাইনবাবগঞ্জ  জেলা রেজিস্ট্রার নাজির আহমেদ রিপন  ও সদরের  সাব রেজিস্ট্রার জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ আর দুর্নীতি অভিযোগ পাওয়া গেছে এখানে একটাই সিস্টেম ঘুষ দিন আপনার কাজ বুঝে নিন ঘুষ ছাড়া কোন কাজ হয় না এই অফিসে

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের   সাব রেজিস্ট্রার মোঃ জহুরুল ইসলাম  ও জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ  নাজির আহাম্মেদ  রিপন এর বিরুদ্ধে ঘুষ আর দুর্নীতি অভিযোগ পাওয়া গেছে

অভিনব ঘুষ দুর্নীতি আর রমরমা দলিল বাণিজ্যের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার জহিরুল ইসলাম ও জেলা রেজিস্ট্রার মোঃ নাজির আহমেদ রিপন  । এখানে তাদের  কথায় শেষ কথা। জেলা রেজিস্ট্রার নাজির আহমেদ রিপন  সাব রেজিস্ট্রার মোঃ জহুরুল ইসলাম এর   কাছে  থেকে মাসিক মোটা অংকের দক্ষিণা পেয়ে থাকেন
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে মোটা অংকের ঘুষ ছাড়া কোনো
কাজই হয়না। দলিল লেখক সমিতির কয়েকজন নেতা, দালাল সিন্ডিকেটের কতিপয় সদস্য ও তার কথিত সহকারীর মাধ্যমে প্রতিদিন সাব রেজিস্ট্রার জহুরুল ইসলাম   হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। সেই টাকার কিছু অংশ জেলা রেজিস্ট্রার নাজির আহমেদ রিপন  ও, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও আইজিআর অফিসের নামে রেখে দিয়ে সমূদয় টাকা জহিরুল ইসলাম সন্ধ্যায় তুলে নেন নিজের ঝুলিতে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া কোনো জমিই রেজিস্ট্রি হয় না বলে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ।৷ অপেক্ষাকৃত কম লেখাপড়া জানা মানুষকে “কাগজপত্রে সমস্যা আছে” এ কথা বলে দাবি করা হয় মোটা অংকের উৎকোচ। না দিলে জমি রেজিস্ট্রির ক্ষেত্র শুরু হয় নানান টালবাহানা। তার অফিসের ক্লার্ক থেকে শুরু করে সাব রেজিস্ট্রার অফিসের মোহরার, টিসি মোহরার ও সহকারীসহ সবাইকে ঘুষ দিতে সুকৌশলে বাধ্য করা হয়। সরকারি ‘ফি’ এর বাইরে কথিত সহকারীকে দিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। ফ্রেশ জমিকে ডোবা, নালা, পতিত ও ধানী জমি বলে মোটা অংকের নজরানা নিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয় গোপন চুক্তিতে।
সবমিলে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছ চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিস। ভুক্তভোগীরা জানায়, বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার জহিরুল ইসলাম এই অফিসে যোগদান করেই অবৈধ উপায়ে দু’হাতে অর্থ উপার্জনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।।
সূত্র জানায়, সাব রেজিস্ট্রার প্রতিমাসে ৫০ লাখ টাকা অবৈধ উপায়ে উপার্জন করেন।
নির্ভরযোগ্য  অনুসন্ধান সূত্রে ,জানা গেছে  সাব রেজিস্ট্রার জহিরুল  ইসলাম  কোন কোন দিন ৮/১০ লাখ টাকাও অবৈধ পথে উপার্জন করে থাকেন। এই টাকার ফিফটি পার্সেন্ট  জেলা রেজিস্ট্রার কে দিতে হয় এবং কিছু  অংশ দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। তিনি দাম্ভিকতার সুরে বলেন, তার বিরুদ্ধে কেউ কিছুই করতে  পারবেনা। কারণ তিনি সব জায়গাতেই সিস্টেম করে চলেন বলে জানিয়েছেন তার কথিত সহকারী। জমি রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকার পরও দলিলপ্রতি নির্ধারিত হারে সহকারীর মাধ্যমে সাব রেজিস্ট্রারকে মোটা অংকের ঘুষ দিতে হয়। হাতিয়ে নেয়া হয় নাস্তা খরচের নামে হাজার হাজার টাকা।

এ অফিসে দলিলপ্রতি নির্ধারিত হারে উৎকোচ দেয়াটা বৈধ বলেই মনে করছেন ভূক্তভোগীরা।
সচেতন এলাকাবাসীর দাবি, প্রতিদিন অফিস সময়ের পরে ঘুষ/উৎকোচের টাকা নিয়ে বাসায় যাওয়ার সময় দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযান পরিচালনা করলে সাব রেজিস্ট্রার ও তার কথিত সহকারীকে হাতেনাতে ঘুষের টাকাসহ আটক করা সম্ভব।
সচেতন মহলের অভিমত, দুর্নীতি দমন কমিশন গোপনে অভিযান পরিচালনা করলে অবশ্যই দুর্নীতিবাজ সাব রেজিস্ট্রার ও জেলা রেজিস্ট্রার  এবং  কথিত সহকারীর কোটি কোটি টাকার বেপরোয়া দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসবে। তার অনৈতিক উৎকোচ গ্রহণের কারণে রেজিস্ট্রেশন বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
সাব রেজিস্ট্রারের পক্ষে তার কথিত সহকারী জেলা রেজিস্ট্রার, আইজিআর অফিস ম্যানেজ করে এইসব বেপরোয়া কর্মকাণ্ড চালান।
এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন ও আইজিআর মহোদয়ের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী বিস্তারিত আরও জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন সারা বাংলাদেশের দুর্নীতি বাজ দের মুখোশ খুলে দিতে আমরা আছি আপনাদের সাথে

যুক্তরাজ্যের উপকূলে তেল ট্যাঙ্কার-পণ্যবাহী জাহাজের সংঘর্ষ, হতাহত ৩০

ডিজিটাল নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫, ১০:৩১ অপরাহ্ণ
   
যুক্তরাজ্যের উপকূলে তেল ট্যাঙ্কার-পণ্যবাহী জাহাজের সংঘর্ষ, হতাহত ৩০

যুক্তরাজ্যের পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে তেল ট্যাঙ্কার এবং একটি পণ্যবাহী জাহাজের সংঘর্ষে উভয় জাহাজেই আগুন লেগে গেছে। ঘটনার পরপরই অভিযান চালিয়ে কমপক্ষে ৩২ জনকে হতহাত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে

সোমবার (১০ মার্চ) ব্রিটিশ মেরিটাইম অ্যান্ড কোস্টগার্ড এজেন্সির একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, পূর্ব ইয়র্কশায়ার কাউন্টির উপকূলে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

ব্রিটিশ মিডিয়ায় ঘটনাস্থলের ফুটেজে কালো ধোঁয়া এবং আগুনের বিশাল কুণ্ডলী উঠতে দেখা যাচ্ছে। গ্রিমসবি ইস্ট বন্দরের প্রধান নির্বাহী মার্টিন বয়ার্স বলেন, কমপক্ষে ৩২ জন হতাহতকে তীরে আনা হয়েছে। তবে তাদের অবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।

জরুরি প্রতিক্রিয়া নিয়ে কাজ করা রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউশন জানিয়েছে, অনেক লোক জাহাজ থেকে বেড়িয়ে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। উপকূলরক্ষী বাহিনীর পাশাপাশি ঘটনাস্থলে তিনটি লাইফবোট অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজে কাজ করছে।

সুইডিশ ট্যাঙ্কার কোম্পানি স্টেনা বাল্ক নিশ্চিত করেছে, দুর্ঘটনায় জড়িত তেল ট্যাঙ্কারটির মালিকানা তাদের। এটি যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক একটি সামুদ্রিক কোম্পানি পরিচালনা করে আসছে।