
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার পর্যাপ্ত বনজ সম্পদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে ব্রিটিশ আমল থেকেই৷ তারমধ্যে দেশের সবচেয়ে দামি গাছ সেগুনের অবস্থান অন্যতম, বিশেষ করে সৌখিন,টেকসই ও বিলাসী আসবাবপত্র তৈরীতে সেগুন গাছের জুরি নেই৷ তাই সেগুনের দেশ ও বিদেশে সেগুন গাছের ফানিচারের চাহিদা ব্যাপক৷ সেগুনের চাহিদা বেশী থাকায় এর ব্যবসা পদ্ধতি ও অনেক৷ কিন্তু সেগুন গাছ ব্যবসার ক্ষেত্রে সরকারী বন বিভাগের যে জোত পারমিট, তাও এখন বিশাল ব্যবসা ক্ষেত্র৷ বন বিভাগের একজন বনপ্রহরী থেকে বিট কর্মকর্তা, ফাঁড়ি রেঞ্জার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, রাঙামাটি প্রধান বন সংরক্ষক, প্রধান বন সংরক্ষক ও বন মন্ত্রলয়ের কর্মকর্তা সবাই এই ভুয়া পারমিট তৈরী ব্যবসার সাথে জড়িত বলে জানিয়েছেন ভুক্ত ভোগীরা ৷ পার্বত্য অঞ্চলে বাগানে গাছ থাক আর না থাক টাকা দিলে ভুয়া পারমিট মিলছে প্রতি দিন ৷ রাঙামাটি বন বিভাগে ঘুষ দিলেই মিলে সেগুন গাছের ভুয়া পারমিট
একটি ভুয়া পারমিট প্রক্রিয়া : জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পূর্বে উপজেলা ভিত্তিক তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট প্রেরন করা হয়৷ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ১৩ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষের টাকা গ্রহণ করে অফিস থেকে জমির তদন্ত রিপোর্ট জেলা প্রশাসক অফিসে প্রেরণ করেন, জেলা প্রশাসক প্রতি পারমিট বাবদ ৫ হাজার টাকা অফিস খরচ বাবদ গ্রহণ করে “এ” ফরম ডিএফও’দের (বিভাগীয় বন কর্মকর্তা) নিকট প্রেরণ করেন৷ ডিএফও উক্ত পারমিট খাড়া মার্কার জন্য সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ কর্মকর্তার নিকট প্রেরন করেন, রেঞ্জ কর্মকর্তা জোত ভুমিতে যেতে ৭ থেকে ৮ হাজার ঘুষের টাকা গ্রহণ করে পুরাতন বাগান থেকে তোলা রাজকীয় করে শুধু ছবি তুলে এবং বন প্রহরী বা এফজিদের পাঠায়, এফজি’রা উক্ত ভুমিতে ১০০টি গাছ থাকলে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে ৪০০ থেকে ৫০০ গাছের খাড়া মার্কা সাইজ লিষ্ট তৈরী করে এবং রেঞ্জ কর্মকর্তা মুল পারমিটের প্রতি ফুট ৬% করে টাকা ঘুষ নিয়ে খাড়া মার্কার লিষ্ট ডিএফও বরাবর প্রেরণ করেন, ডিএফও আবার ৬% করে টাকা ঘুষ নিয়ে নামমাত্র তদন্ত পুর্বক অহরহ ভুয়া পারমিট ইস্যু করেন৷ এখানে কথা থাকে যে একদিনে পারমিট দেখে সেদিনেই তিনি ১০ থেকে ২০ টি গাছ দেখে সঠিক আছে বলে জোত পারমিট ৮% টাকা ঘুষ নিয়ে পারমিট ইস্যু বা কর্তনের অনুমতি দেন৷ এর পুর্বে গাছ কর্তন করে ক্রয়কৃত ব্যক্তি ফিল্ডলিষ্ট সাবমিট করেন৷ রেঞ্জ কর্মকর্তা আবার ৬ হাজার টাকা ফিল্ড খরচ নিয়ে জোত ভুমিতে তদন্তে যান এবং ছবি তুলে প্রতি ঘনফুটে ২০ টাকা নিয়ে “ডি” ফরম ডিএফও’র নিকট প্রেরন করেন, ডিএফও আবার ৩০% টাকা ঘুষ নিয়ে এসিএফ’কে জোত ভুমিতে পাঠায়, এখানেও রেঞ্জ কর্মকর্তা ৭ হাজার টাকা ফিল্ড খরচ নিয়ে এসিএফ’কে জোত ভুমিতে নিয়ে যান, এবং ছবি তুলে প্রতি ঘনফুট ৬% হারে টাকা নিয়ে ডিএফও’কে “ডি” ফরম আবেদন করেন৷ ডিএফও উক্ত আবেদনের প্রেৰিতে প্রতি ঘনফুট ৮% করে নিয়ে “ডি ” ফরম বই ইসু্য করেন৷ এই “ডি” ফরমের অনুকুলে বিভিন্ন জোত হতে কাঠ রাঙামাটি শহরে বিভিন্ন করাত কলে ভারতীয় কাঠ জমা হয়৷ এরপর উক্ত “ডি” ফরমের কাঠ ঢাকা বা দেশের অন্যান্য স্থানে পরিবহনের জন্য চলাচল বা টিপি পাস ইস্যু করে এবং প্রত্যেক সদর রেঞ্জ প্রতি গাড়ীতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ঘুষ গ্রহন করে গাড়ী লোড করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিবহন করে৷
একজন কাঠ ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভুয়া পারমিট তৈরীর ও ঘুষ লেন- দেন এর ক্ষেত্রে রাঙামাটি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতি গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা পালন করে, যেমন গাড়ী লোড করার পর প্রতি গাড়ীতে স্থানীয় প্রশাসনের জন্য ২০ হাজার টাকা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির ছাড়পত্র দিলে গাড়ীটির টিপি পাওয়া যায়, না হলে রেঞ্জ কর্মকর্তা টিপি দেওয়ার পরও গাড়ীর লোড চেকিং দেন না৷
এতে প্রমান হয় যে, উক্ত পারমিট ভুঁয়াভাবে কাগজে কলমে ইস্যু করা হয়, সেগুলো টাকার বিনিময়ে করা হয়৷
সরেজমিনে গত ৬মাস অনুসন্ধান করে এই চিত্র দেখা যায়৷ এখানে আরো দৃশ্যমান হয় যে, রাঙামাটি জেলায় ১ হাজার ঘনফুট কাঠের পারমিট ছাড়পত্র দেওয়ার মত বাগানই নেই, সেখানে ১০ হাজার ১২ হাজার ঘনফুটের পারমিট ইস্যু করা হয় এবং ভুয়া আইডি তৈরী করে ভারতীয় কাঠ পাচার করা হয়৷
সংক্ষিপ্ত টহলের মাধ্যমে একমাসে ভুয়া ও কাগজপত্র বিহীন হাজার হাজার ঘনফুট ভারতীয় সেগুন কাঠ জব্দ করেছে ২৫ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) এর জোয়ানরা৷
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা থেকে নামে বেনামে ভুয়া পারমিট ইস্যু করা হয়, সেসব কাঠ ভারতের মিজুরাম থেকে ডেঠামুখ হয়ে বড় হরিনা, ছোট হরিনা ও বরকল হয়ে রাঙামাটি শহরে প্রবেশ করে চলে যায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়৷
বর্তমানে কয়েক সাপ্তাহ ধরে রাঙামাটি বন সার্কেল থেকে সকল ধরনের ঘুষ বানিজ্য হচ্ছে
প্রতিদিন সন্ধ্যা নামার সাথে রাঙামাটি শহরের মানিকছড়ি থেকে ঘাগড়া হয়ে চোরাই কাঠ পাচার হচ্ছে
পরিবেশবিদ ও অভিজ্ঞ মহল মনে করে রাঙামাটি বন সার্কেল থেকে বিগত ৬মাস ধরে যে সব কাঠের পারমিট ইস্যু করা হয়েছে সেসব আগে তদন্ত করা হোক ৷ তাহলেই বন বিভাগের ঘুষ লেন-দেন এর থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে৷ এলাকাবাসীর জোর দাবী জানিয়েছেন তারা, তার পর নতুন জোত পারমিট ইস্যু করা যেতে পারে৷
উল্লেখ্য, ভুয়া পারমিট ইস্যু, চোরাই পথে কাঠ পাচার ও ঘুষ দাতাদের পদচারনায় রাঙামাটি সার্কেল বিরুদ্ধে দুর্নীতি শেষ নেই
ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ রাঙামাটির বিরুদ্ধে ঘুষ আর দুর্নীতি অভিযোগে জানা গেছে রাঙামাটি বন বিভাগ যেন গভীর বনের মতোই অন্ধকারে নির্যাতিত হয়ে পড়ছে। এই সেক্টরে দুর্নীতি ও লুটপাট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তা সহজে প্রকাশ পায় না প্রকল্প কিংবা রাজস্ব খাতের বরাদ্দের টাকা কাগজে-কলমে কাজ দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা ঘুষের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে সরকার দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিলেও কিছুসংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারির কারণে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না। স্বয়ং দেশের ও সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে দুর্নীতি বন্ধে হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরও কোনো কিছুতেই কাজে আসছে না। উন্নয়ন প্রশংসিত হলেও দুর্নীতি এবং অনিয়মের কারণে সুশাসন আজ প্রশ্নবিদ্ধ। সর্বপ্রথম ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ রাঙামাটি কে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে বন অধিদপ্তরের অভাবনীয় সাফল্য আজ ম্লান হতে চলেছে কিছুসংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা/কর্মচারিদের জন্য এক জন এস, এম, মাহবুব উল আলম,রেঞ্জ কর্মকর্তা,উল্টাছড়ি রেঞ্জঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ, রাঙ্গামাটি।
এবং দ্বিতীয় ব্যক্তি বাবু রাম চাকমা রেঞ্জ কর্মকর্তা,ফুল গাজী রেঞ্জ ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ, রাঙ্গামাটি এবং তৃতীয় ব্যক্তি মোঃ আবদুল গফুর খান চৌধুরী রেঞ্জ কর্মকর্তা,খাসখালী রেঞ্জঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ, রাঙ্গামাটি। চতুর্থ ব্যক্তি মোঃ নজরুল ইসলাম রেঞ্জ কর্মকর্তা,মেরুং রেঞ্জঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ, রাঙ্গামাটি।পঞ্চম ব্যক্তি মোঃ সাজ্জাদ হোসেন রেঞ্জ কর্মকর্তা,হাজা ছড়ি রেঞ্জ ঝুম নিয়ন্ত্রণ বন বিভাগ, রাঙ্গামাটি
এই পাঁচ জন দুর্নীতিবাজ বন কমকর্তা অবৈধ অর্থের জোরে একটি বিশেষ মহলকে ‘খুশি’ করে সম্প্রতি ঝুম নিয়ন্ত্রণ রাঙামাটি বন বিভাগে পোস্টিং নিয়েছেন। প্রজাতন্ত্রের এ কর্মচারি তার পদ-পদবীর অপব্যবহার করে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন। এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় থাকলেও ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকেন তাঁরা এ ঘটনায় জেলার বনকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে এবং দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন রাঙামাটি এলাকাবাসীর জোর দাবি সঠিক ভাবে তদন্ত করলেই থলের বিড়াল বেরিয়ে আসবে বিস্তারিত আরও জানতে দৈনিক সকাল বেলা পত্রিকা তে চোখ রাখুন এবং সারা বাংলাদেশের দুর্নীতি বাজ দের মুখোশ উন্মোচন করতে আমরা আছি আপনাদের মাঝে