
গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে তিনটি সেতুর কাজ শেষ না করেই ‘অস্ত্র ঠেকিয়ে’ পুরো টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের মাঝকান্দি-খাগড়াবাড়িয়া সড়কের এই তিনটি সেতুর মূল নির্মাণকাজ শেষ হয় আট বছর আগে। তবে কোনোটিরই সংডোগ সড়ক তৈরি করেননি ঠিকাদার। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা পরিষদের অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন।
তিনি বলেন, ‘তিনটি সেতুর মূল নির্মাণকাজ শেষ হলেও কোনোটিরই সংযোগ সড়ক তৈরি করেনি ঠিকাদার। কিন্তু ‘অস্ত্র ঠেকিয়ে’ প্রকল্পের পুরো টাকাটা তুলে নিয়েছেন ঠিকাদার’
জানা যায়, উপজেলার ওড়াকান্দি ইউনিয়নের মাঝকান্দি-খাগড়াবাড়িয়া সড়কে তিনটি সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে ৮ বছর আগে। পরবর্তীতে দুটি সেতুতে ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে মাটি কেটে মানুষ চলাচলের ব্যবস্থা করা হলেও গাড়ি চলাচল করতে পারে না।
অন্যটি বাঁশের সিঁড়ির মাধ্যমে ব্যবহার করছে মানুষ। এটি ভোগান্তি কমানোর বদলে বাড়িয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। মাইজকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. বেল্লাল খান, আমিরুল ইসলাম, তাসলিমা বেগম বলেন, ‘ভোগান্তি দূর করতে সেতু নির্মাণ করে আরও ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। সিঁড়ি বেয়ে সেতুতে উঠতে হয়। শিশু ও বৃদ্ধরা মাঝে-মধ্যে সিঁড়ি থেকে হোঁচট খেয়ে পড়ে আহত হয়। মাইজকান্দি গ্রামের মোরাদ তালুকদার সেতু থেকে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছে। পরে তার বাম পা কেটে ফেলতে হয়েছে।’
মাইজকান্দি গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রকৌশলীদের সঙ্গে যোগসাজশ না থাকলে অ্যাপ্রোচ সড়ক না করেই কীভাবে ঠিকাদার টাকা তুলে নিল? যদিও জেলা পরিষদের অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন কোনো ধরনের যোগসাজশ বা ঘুষের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার ভাষ্য, ‘আমি বিলে প্রথমে স্বাক্ষর করতে চাইনি। পরে ঠিকাদার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম অস্ত্র ঠেকিয়ে আমার কাছ থেকে জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন।’
তিনটি সেতুতেই দুর্নীতি হয়েছে- এমন অভিযোগে ভিত্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোপালগঞ্জ জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সোহরাফ হোসেন সোহেলের নেতৃত্বে গঠিত দলের তদন্ত শুরু হয়েছে। তারা তিনটি সেতুই পরিদর্শন করেছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দুর্নীতির আলামত পাওয়া গেছে জানিয়ে দুদকের জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘অভিযোগটি দুদকে তফসিলভুক্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে মামলা করার জন্য সুপারিশ করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তীতে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।’
দুদক জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ওড়াকান্দি ইউনিয়নের আড়কান্দি সেতু হতে মাইজকান্দি হয়ে আড়ুয়াকান্দি খাল পর্যন্ত তিনটি সেতুসহ এইচবিবি রাস্তার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। নির্মাণ কাজের প্রাক্কালিত মূল্য ছিল ৯০ লাখ টাকা। কাজটি বাস্তবায়নের জন্য কাশিয়ানীর মেসার্স হাবিব অ্যান্ড কোম্পানি নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর কার্যাদেশ দেয় জেলা পরিষদ। তবে মেসার্স হাবিব অ্যান্ড কোম্পানির নামে কাজটি করেন গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম। ৯০ লাখ টাকার মধ্যে তিনটি অ্যাপ্রোচ সড়কের জন্য বরাদ্দ ছিল ৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। কিন্তু অ্যাপ্রোচ সড়ক না করেই তিনি সেই টাকাও তুলে নেন। অ্যাপ্রোচ সড়ক ছাড়াই তিনটি সেতু ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেন জেলা পরিষদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনির হোসেন ও সহকারী প্রকৌশলী মো. আনিচুর রহমান।
এ বিষয়ে ওড়াকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান বদরুল আলম বিটুল জানান, ঠিকাদার পুরো বিল নিয়ে শুধু তিনটি সেতু নির্মাণ করেছে। সংযোগ সড়ক না থাকায় আট বছর ধরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে এলাকাবাসী। তিনি আরও জানান, এলাকাবাসীর সুবিধার্থে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় মাটি কেটে সাময়িক চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
গত ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর গা-ঢাকা দিয়েছেন ঠিকাদার। অন্যদিকে তার ব্যবহিত মোবাইল বন্ধ পাওয়ায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, আমি দ্রুতই সরজমিন পরিদর্শন করে জনগণের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করব।