চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার জহিরুল ইসলাম ও শিবগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার তৌহিদুল ইসলাম রুবেল ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার নাজির আহমেদ রিপনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। তিনি দীর্ঘদিন ধরে সিন্ডিগেট তৈরি করে ঘুষ বাণিজ্য করে থাকেন এমনটিই জানা গেছে সংশ্লিষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতার নিকট থেকে। জমির নিবন্ধন, নামজারি, জাল দলিলে জমি দখলসহ নানা ঘটনায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন জমির মালিকসহ ভুক্তভোগীরা।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, আমরা কোনো দলিল রেজিস্ট্রির জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিসে গেলে হয়রানির শেষ থাকে না। দিতে হয় মোটা অঙ্কের ঘুষ। ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হবে না বলে প্রকাশ্যে জানিয়ে দেন সাব-রেজিস্ট্রারসহ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। আমরা তাদের কাছে জিম্মি। প্রকাশ্যে টিপসহি প্রতি ঘুষ নিচ্ছেন ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। কোনো অদৃশ্য শক্তির বলে প্রকাশ্যে এভাবে ঘুষ নেন একজন পিয়ন, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। এ ব্যাপারে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।
সাধারণ মানুষের ধারণা সরকারি অফিস মানেই হচ্ছে ঘুষ বা অবৈধ লেনদেনের কারবারের জায়গা। সরকারি কর্মকর্তা মানে হচ্ছে জনগণের সেবক, এমন বিষয়টিই আমরা জেনে আসছি। কিন্তু তাঁরা আসলে কতটা জনগণের সেবক, তা নিয়ে জনগণের মনেই সব সময় সন্দেহ কাজ করে। আর সংবাদমাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি নিয়ে প্রকাশিত খবরাখবর থেকেই আমরা বুঝতে পারি বাস্তবতা আসলে কী বলে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েও বিগত সরকার ব্যর্থ হয়েছে। বরং কোনো কোনো জায়গায় ছাড় দিয়ে দুর্নীতিকে আরও প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এখন নতুন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কি পারবে সরকারি অফিসগুলো দুর্নীতিমুক্ত করতে?
ঘুষ, চাঁদাবাজি বা অবৈধ লেনদেনের সব সময় বড় অভিযোগ ওঠে তহশিল অফিস ও সাবরেজিস্ট্রি অফিসগুলোকে কেন্দ্র করে। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে জমির দলিলসহ সরকারি যেকোনো দলিল বা চুক্তিপত্র নিবন্ধন করা হয়। সরকারের রাজস্ব আদায়ের বড় উৎস এসব অফিস। কিন্তু অভিযোগ আছে, যত রাজস্ব এসব অফিস থেকে আদায় করা হয়, তার চেয়ে বহুগুণ অর্থ এখানে অবৈধভাবে লেনদেন হয়। এ নিয়ে সব সময় সংবাদমাধ্যমগুলো সরব থেকেছে। এরপরও দেশজুড়ে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে দুর্নীতির দৌরাত্ম্য কমেনি। অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও দিন শেষে পরিস্থিতি আগের জায়গায় গিয়েই ঠেকে।
অভিনব ঘুষ দুর্নীতি আর রমরমা দলিল বাণিজ্যের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার জহিরুল ইসলাম। শিবগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার তৌহিদুল ইসলাম রুবেল ও জেলা রেজিস্ট্রার নাজির আহমেদ রিপন এখানে তাদের কথায় শেষ কথা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে মোটা অংকের ঘুষ ছাড়া কোনো কাজই হয় না। দলিল লেখক সমিতির কয়েকজন নেতা, দালাল সিন্ডিকেটের কতিপয় সদস্য ও তার কথিত সহকারীর মাধ্যমে প্রতিদিন সাব রেজিস্ট্রার হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। সেই টাকার কিছু অংশ জেলা রেজিস্ট্রার, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও আইজিআর অফিসের নামে রেখে দিয়ে সমুদয় টাকা জহিরুল ইসলাম সন্ধ্যায় তুলে নেন নিজের ঝুলিতে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ ছাড়া কোনো জমিই রেজিস্ট্রি হয় না বলে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ। অপেক্ষাকৃত কম লেখাপড়া জানা মানুষকে “কাগজপত্রে সমস্যা আছে” এ কথা বলে দাবি করা হয় মোটা অংকের উৎকোচ। না দিলে জমি রেজিস্ট্রির ক্ষেত্র শুরু হয় নানান টালবাহানা। তার অফিসের ক্লার্ক থেকে শুরু করে সাব রেজিস্ট্রার অফিসের মোহরার, টিসি মোহরার ও সহকারীসহ সবাইকে ঘুষ দিতে সুকৌশলে বাধ্য করা হয়। সরকারি ‘ফি’ এর বাইরে কথিত সহকারীকে দিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। ফ্রেশ জমিকে ডোবা, নালা, পতিত ও ধানী জমি বলে মোটা অংকের নজরানা নিয়ে রেজিস্ট্রি করা হয় গোপন চুক্তিতে।
সব মিলে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রি অফিস। ভুক্তভোগীরা জানায়, বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার জহিরুল ইসলাম এই অফিসে যোগদান করেই অবৈধ উপায়ে দু’হাতে অর্থ উপার্জনে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
সূত্র জানায়, সাব রেজিস্ট্রার প্রতিমাসে ৫০ লাখ টাকা অবৈধ উপায়ে উপার্জন করেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রকাশ, সাব রেজিস্ট্রার জহিরুল কোন কোন দিন ৮/১০ লাখ টাকাও অবৈধ পথে উপার্জন করে থাকেন। এই টাকার কিছু অংশ দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। তিনি দাম্ভিকতার সুরে বলেন, তার বিরুদ্ধে কেউ কিছুই করতে পারবে না। কারণ তিনি সব জায়গাতেই সিস্টেম করে চলেন বলে জানিয়েছেন তার কথিত সহকারী। জমি রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকার পরও দলিলপ্রতি নির্ধারিত হারে সহকারীর মাধ্যমে সাব রেজিস্ট্রারকে মোটা অংকের ঘুষ দিতে হয়। হাতিয়ে নেয়া হয় নাস্তা খরচের নামে হাজার হাজার টাকা।
এ অফিসে দলিলপ্রতি নির্ধারিত হারে উৎকোচ দেয়াটা বৈধ বলেই মনে করছেন ভূক্তভোগীরা।
সচেতন এলাকাবাসীর দাবি, প্রতিদিন অফিস সময়ের পরে ঘুষ/উৎকোচের টাকা নিয়ে বাসায় যাওয়ার সময় দুর্নীতি দমন কমিশন অভিযান পরিচালনা করলে সাব রেজিস্ট্রার ও তার কথিত সহকারীকে হাতেনাতে ঘুষের টাকাসহ আটক করা সম্ভব।
সচেতন মহলের অভিমত, দুর্নীতি দমন কমিশন গোপনে অভিযান পরিচালনা করলে অবশ্যই দুর্নীতিবাজ সাব রেজিস্ট্রার ও তার কথিত সহকারীর কোটি কোটি টাকার বেপরোয়া দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসবে। তার অনৈতিক উৎকোচ গ্রহণের কারণে রেজিস্ট্রেশন বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হওয়ার পাশাপাশি অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে।
এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন ও আইজিআর মহোদয়ের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীগণ।
অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সব ধরণের অবৈধ লেনদেন বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা কর্মকর্তাকে যথাযথ জবাবদিহির আওতায় আনা হোক। বিস্তারিত জানতে আমাদের সাথেই থাকুন; সারা বাংলাদেশের দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচন করতে আমরা আছি আপনাদের সাথে
আপনার মতামত লিখুন